আসুন মুক্তি ও শান্তির পথে
অমুসলিমদের প্রতি সালাম দেয়ার বিধান
আসসালামুয়ালাইকুম।
অমুসলিম বন্ধুদের প্রতি আলহামদুলিল্লাহ,জাযাকাল্লাহ ইত্যাদি বলা কি সঠিক?
উত্তরঃ
আসসালামুয়ালাইকুম।
আমরা প্রত্যাশা করি এই জবাব আপনাকে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য ও ঈমানের নিকট নিয়ে যাবে।
আমীন, ইনশাল্লাহ।
অমুসলিমদের মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ বলা সঠিক। তবে তাদেরকে সালাম কিংবা জাযাকাল্লাহ বলা থেকে বিরত থাকা উত্তম। কারণ, এগুলো দুআ হিসেবে অন্যকে বলা হয়ে থাকে। একজন অমুসলিমের প্রতি একজন মুসলিম শুধু এই বলে দুআ করতে পারে, আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে সঠিক পথ এবং হিদায়াত দান করেন।
উত্তম চরিত্র প্রকাশের জন্য একজন মুসলিম একজন অমুসলিমকে এই বলে সম্ভাষণ জ্ঞাপন করতে পারে, “আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সততা ও সঠিক পথ দান করুন।” আর জাযাকাল্লাহ বলার পরিবর্তে “ধন্যবাদ” বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে।
আর আল্লাহ সর্বাপেক্ষা ভাল জানেন।
ফেসবুক গ্রুপঃ Niqab the face Veil থেকে সংগৃহীত।
ভালোবাসা
প্রশ্নঃ
যদি একটি মেয়ে কোন দূরের সম্পর্কীয় ছেলেকে ভালোবাসে তবে কি সে কোন পাপ করবে?
উত্তরঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
ইসলাম এসেছে সেই দরজা বন্ধ করতে যা দুষ্ট ও পাপ কাজকে নেতৃত্ব দেয়। সেইসাথে ইসলাম আগ্রহী সেই সকল কর্মকান্ড বন্ধ করতে যা হৃদয় ও মনের কুপ্রবৃত্তিকে নেতৃত্ব দেয়। এই সকল কর্মকান্ডের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা ও প্রেমান্ধতা নিকৃষ্টতম সমস্যা।
শায়খ আল-ইসলাম ইবন তায়মিয়াহ (রহ.) মাজমো আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন(১০/১২৯),
“ভালোবাসা একটি মানসিক অসুস্থ্যতা, এবং যদি তা প্রবলরূপে দেখা দেয় তবে তবে তা শরীরকে আক্রান্ত করে, যার ফলে শারীরিক অসুস্থ্যতা দেখা দেয়। এ অসুস্থ্যতা যেমন হতে পারে মস্তিষ্কে অথবা শরীরে যেমন দূর্বলতা ও অনান্য।”
তিনি(রহ.) মাজমো আল-ফাতওয়া গ্রন্থে আরো বলেন(১০/১২৯),
“মাহরাম নয় এমন একজন নারীকে ভালোবাসা অনেক ঋণাত্নক পরিণতি বয়ে আনে, যার পূর্ণ ব্যপ্তি কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। এটা এমনই এক অসুস্থ্যতা যা রোগীর ধর্মীয় দায়িত্ববোধে যেমন পেওভাব ফেলে তেমনি তা তার শরীর ও মনেও প্রভাব ফেলে।”
এটা বলে রাখা প্রয়োজন যে বিপরীত লিঙ্গের একজনকে ভালোবাসার একটি প্রভাব হলো ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ের প্রতি দাসত্ব। তাই, ভালোবাসা হলো সেই দরজা যা অবমাননা ও দাসত্বের নেতৃত্ব দেয়। এটাই একজনকে অসুস্থ্য করে ফেলার জন্য যথেষ্ঠ।
ইবন তায়মিয়াহ (রহ.) মাজমো আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন(১০/১৮৫),
“যদি একটি ছেলে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে, এমনকি যদি মেয়েটি তার জন্য বৈধও হয়, তার(ছেলেটির) হৃদয় তার(মেয়েটির) দাস হয়ে যায়, এবং সে(মেয়েটি) তাকে(ছেলেটিকে) নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি যদিও বাহ্যিকভাবে ছেলেটি মেয়েটির নিয়ন্ত্রণকারী হয়েও থাকে। কারণ যদিও সে স্বামী কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে তার স্ত্রীর বন্দি ও দাস, বিশেষত যদি তার স্ত্রীও তার প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন এবং স্বামীকে ভালোবাসে। এক্ষেত্রে তার স্ত্রী তাকে নিয়ন্ত্রণ করে একজন কঠোর ও কঠিন মনিবের মত যেমনটি একজন দাসকে তার মনিব নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঐ দাস কখনোই নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। বরং সে এই দাসের চেয়েও খারাপ অবস্থায় বন্দি থাকে কারণ হৃদয়ের দাসত্ব শারীরিক দাসত্বের চেয়ে অধিকতর নিকৃষ্ট।”
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দূর্বলতা সেই হৃদয়ে ঘটে না যে হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা আছে। এটা কেবল সেই সব হৃদয়কেই আক্রান্ত করে যেগুলো শূন্য ও দূর্বল যার ফলে তা সহজেই আক্রান্ত হয় আর তারপর শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী হয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাকে হারিয়ে দেয় এবং মানুষটিকে শিরকের পথে নিয়ে যায়। এথেকে এটি বলা যায়ঃ ভালোবাসা হলো দূর্বল হৃদয়ের একটি প্রতিক্রিয়া।
যদি হৃদয় পরম করুণাময়ের ভালোবাসা ও স্মরণ থেকে দূরে থাকে এবং যদি তা তাঁর(আল্লাহর) সহিত কথা বলা থেকে দূরে সরে যায় তবে তা নারীর প্রতি ভালোবাসা, ছবি ও বাদ্য-বাজনা শোনার দিকে ঝুঁকে যায়।
শায়খ আল-ইসলাম ইবন তায়মিয়াহ (রহ.) মাজমো আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন(১০/১৩৫),
“যদি হৃদয় শুধুমাত্র আল্লাহকে ভালোবাসে এবং আন্তরিকভাবে তাঁর প্রতি নিয়োজিত হয় তবে তা কখনোই অন্য কারো প্রেমে তো পড়েই না উপরন্তু অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা চিন্তাই করতে পারে না। যখন একটি হৃদয় ভালোবাসায় পতিত হয় তা শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অভাবেই হয়। হযরত ইউসুফ(আঃ) আল্লাহকে ভালোবাসতেন এবং আন্তরিকভাবে তাঁর প্রতি নিয়োজিত ছিলেন বলেই তিনি ভালোবাসার ফাঁদে পড়েননি বরং আল্লাহ বলেছেনঃ(অর্থের ব্যাখ্যা অনুসারে):
“অতঃপর আমি তাঁকে দুষ্ট ও অবৈধ যৌন সংসর্গ থেকে ফিরালাম, তিনি ছিলেন আমার পথ অনুসরণকারী বান্দাদের মধ্যে অন্যতম।”
[সুরা ইউসুফ ১২: ২৪]
যেহেতু আল-আজিজের স্ত্রী ছিলো মুশরিক তাই সে এই ফাঁদে পড়েছিল। ”
মুসলিমদেরকে অবশ্যই এই চরম পরিণতি হতে নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং নিজেদেরকে প্রহরার মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে ও ব্যর্থ হওয়া চলবে না । যদি সে এ বিষয়ে ব্যর্থ হয় এবং ভালোবাসার পন্থা অনুসরণ করে হারাম বস্তু দর্শন অথবা হারাম বস্তু শ্রবণ চালিয়ে যায় এবং নির্লিপ্তভাবে বিপরীত লিঙ্গের সাথে কথা বলা চালিয়ে যায় তখন সে ভালোবাসায় পতিত হয়, তখন সে পাপে নিমজ্জিত হয় এবং তাকে তার এই কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পেতে হবে।
বহু সংখ্যক মানুষ এই সমস্যার শুরুর দিকে নির্লিপ্ত থাকে এবং ভাবে যে যখন খুশি তারা নিজেদেরকে এ থেকে মুক্ত করতে পারবে অথবা তারা একটি নির্দিষ্ট সীমার পর গিয়ে থামতে পারবে এবং আর অগ্রসর হবে না। যখন অসুস্থ্যতা শক্তিশালী আকার ধারণ করে কোন ডাক্তার কিংবা প্রতিষেধক কি তাকে সাহায্য করতে পারে?
ইবন আল-কাইয়ূম (রহ.) রাওদাত আল-মুহিব্বিন গ্রন্থে বলেন(১৪৭):
“যদি ঘটনাটি তার ইচ্ছাকৃত কারণে ঘটে তবে তার ফলাফলের জন্য কোন ক্ষমা নেই যা তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। নিশ্চিতভাবে এটা একটা মানুষের মাদক গ্রহণের মত, যার দায় তাকেই নিতে হবে।”
যদি কোন ব্যক্তি প্রাণপণে চেষ্টা করে সেই কারণ থেকে দূরে থাকতে যা তাকে এই মারাত্নক অসুস্থ্যতার দিকে নিয়ে যায়, দৃষ্টি সংযত করার মাধ্যমে এবং হারাম বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত না করে, হারাম জিনিস শ্রবণ না করে এবং শয়তান তাঁর মনে যে চিন্তা ঢুকিয়ে দেয় তা থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেয় তারপরও যদি অসুস্থ্যতা যদি তাকে আক্রান্ত করে কোন দৃষ্টিপাত কিংবা লেন্দেনের মাধ্যমে যা মূলত বৈধ এবং তাঁর হৃদয় একজন নারীর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে কোন পাপ নেই ইনশাল্লাহ। কারণ আল্লাহ বলেছেনঃ(অর্থের ব্যাখ্যা অনুসারে)
“আল্লাহ কোন মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে কোন বোঝা চাপিয়ে দেন না”
[আল-বাকারা ২:২৮৬]
ইবন তায়মিয়াহ (রহ.) মাজমো আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন(১১/১০),
“যদি তা তার নির্লিপ্ততা অথবা সীমালঙ্ঘনের কারণে না ঘটে, তবে যা সংঘটিত হয়েছে তাতে কোন পাপ নেই।”
ইবন আল-কাইয়ূম (রহ.) রাওদাত আল-মুহিব্বিন গ্রন্থে বলেন(১৪৭):
“যদি ভালোবাসা এমন কোন একটি কারণে ঘটে যা হারাম নয়, তবে মানুষটতকে দোষী করা যায় না, যেমন একজন মানুষ তার স্ত্রীকে অথবা দাসীকে ভালোবাসে, যখন সে স্ত্রীর থেকে দূরেও থাকে তখনও ভালোবাসা থেকে যায় আর তা কখনও তাকে ত্যাগ করে না। তাকে এর জন্য দোষী করা যাবে না। একইভাবে, যদি হঠাৎ একনজর দৃষ্টি তার হৃদয়কে প্রেমে ফেলে দেয় তবে যেভাবেই হোক তাকে তা প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে হবে।”
কিন্তু তাকে অবশ্যই ভালোবাসার প্রভাব থেকে নিজের হৃদয়কে নিবৃত্ত করতে হবে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার দ্বারা এবং তাঁর সাহায্য প্রাথনা করে। তার লজ্জা করা উচিত না বুদ্ধিমান ও বিশ্বস্ত মানুষের পরামর্শ নেয়ার অথবা ডাক্তার কিংবা মনোবিদের সাহায্য নেয়ার ক্ষেত্রে, কারণ এতে করে সে কোন প্রতিকার খুঁজে পেতে পারে। এটা করার জন্য তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে, (আল্লাহর তরফ থেকে)পুরষ্কার সন্ধান করতে হবে, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং নীরব থাকতে হবে, আর আল্লাহ তার জন্য পুরষ্কারের ঘোষণা দিবেন ইনশাল্লাহ।
শায়খ আল-ইসলাম ইবন তায়মিয়াহ (রহ.) মাজমো আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন(১০/১৩৩),
“যদি সে ভালোবাসায় পতিত হয় কিন্তু তারপরও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে, তখন সে পুরষ্কৃত হবে আল্লাহকে ভয় করার জন্য। শরীয়াতের সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে দেখা যায় যদি একজন ব্যক্তি পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং হারাম বস্তু দর্শন থেকে বিরত থাকে, হারাম শব্দ ও ক্রিয়া থেকে বিরত থাকে এবং সে এই ব্যাপারে নীরব থাকে ও এই ব্যাপারে কথা না বলে যেন এই বিষয়ে কথা বলাই হারাম, কাউকে অভিযোগ না করে অথবা প্রকাশ্যে কুকর্ম না করে অথবা ভালোবাসার মানুষের পিছু লেগে না থেকে এনং সে ধৈর্যশীল থাকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে, ভালোবাসার ব্যাথা হৃদয়ে অনুভব করা সত্ত্বেও যেমন করে একজন মানুষ প্রবল দুর্দশাতেও ব্যাথা সহ্য করে যায় ধৈর্যের সাথে তখন সে হয় তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহকে ভয় করে ও ধৈর্য ধারণ করে।
“ বস্তুত যিনি আল্লাহকে আজ্ঞানুবর্তী হয়ে ভয় করেন(পাপ ও দুষ্ট কাজ থেকে বিরত থেকে), এবং ধৈর্য ধারণ করেন তখন নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সৎকর্মশীলের পুরষ্কার ব্যর্থ হয়ে যেতে দেবেন না।” [সুরা ইউসুফ ১২: ৯০]”
প্রশ্ন নং ২০৯৪৯ ও ৩৩৭০২ দেখারও অনুরোধ রইল।
আর আল্লাহ সর্বাপেক্ষা ভালো জানেন।
তিনি তার বোনের স্বামীর মেয়েকে বিয়ে করতে চান
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
হ্যাঁ, এটি অনুমোদিত। কারণ তিনি নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত মাহরামের লিস্টে অন্তর্ভুক্ত নন (অর্থের ব্যাখ্যা অনুসারে):
“তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ (বিবাহের ব্যাপারে) হলঃ তোমাদের মাতাগণ, তোমাদের কন্যাগণ, তোমাদের বোনগণ, তোমাদের পিতার বোনগণ, তোমাদের মাতার বোনগণ, তোমাদের ভাইয়ের কন্যাগণ, তোমাদের বোনের কন্যাগণ, তোমাদের দুধ মাতাগণ যারা তোমাদের স্তন্য দান করেছেন, তোমাদের দুধ বোনগণ যারা ও তোমরা একই দুধ মাতার স্তন্য পান করেছ ...”
[সুরা আন-নিসা ৪: ২৩]
এখানের তালিকায় মাহরামদের মধ্যে “তোমাদের বোনের কন্যা ” বলা হয়েছে। আর আপনি যার কথা বলেছেন তিনি আপনার বোনের কন্যা নন। তাই, এক্ষেত্রে এই বিয়ে - রক্তের ভিত্তিতে, দুগ্ধদানের ভিত্তিতে অথবা বিবাহের কারণে সৃষ্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে হারাম হবার কোন কারণ নেই।
এবং আল্লাহ সর্বাপেক্ষা ভাল জানেন।
ইসলামিক কোয়েশ্চেন & অ্যান্সার
শায়েখ মুহাম্মদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
কুরআনের মিরাকেল: ক্ষুধায় মরণাপন্ন ব্যক্তিকে মৃত জন্তু থেকে খাওয়ার অনুমতি দিল কেন? এটা কি বিজ্ঞান সম্মত?
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের গোশত ও আল্লাহ তায়ালার নামে ব্যতিত অন্যের নামে জবেহকৃত জন্তুকে হারাম করেছেন। আর যে ব্যক্তি নাফরমানী ও সীমালংঘন না করে বাধ্য হয় (জীবন বাচানোর তাগিদে প্রয়োজন মাফিক আহার করে) তার কোন গুনাহ নেই। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা:১৭৩)
মিশরের অধিকাংশ মসজিদে তারাবীহ নামাজ অর্ধেক পড়ার পর বাকী অর্ধেক শুরু করার আগে ১০ কিংবা ১৫ মিনিট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন আলেমগণ।
গত কয়েকদিন আগে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্রদের ছাত্রাবাস "ফরেন ইসলামিক স্টুডেন্ট সিটি" তে ১০ রাকাত তারাবীহ নামাজের পর বাকী ১০ রাকাতের আগে আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টর আলোচনা করলেন উসুলে ফিকহের (ফিকহের ব্যাকরণ শাস্ত্র) উপর। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি কুরআনের একটি মিরাকেল তুলে ধরলেন।
তিনি বললেন: জনৈক বিজ্ঞানী কুরআন শরীফের উপরোক্ত আয়াত পড়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এই বলে যে, মৃত জন্তুতে প্রচুর পরিমাণে রোগের জীবানু থাকে। কিন্তু, ইসলাম অনোন্যপায় ব্যক্তিকে তা খাওয়ার অনুমতি দিল কেন? সে তো তা খেলে মারা যাবে? ইসলামের এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।
পরবর্তীতে উক্ত বিজ্ঞানী মৃত জন্তুর গোশত নিয়ে একজন সাধারণ ব্যক্তির পাকস্থলির রস উক্ত গোশতের উপর রাখলেন। দেখলেন যে, গোশত জীবানুতে ভরপুর হয়ে আছে। তারপর যখন ক্ষুধায় মরোণাপন্ন ব্যক্তির পাকস্থলির রস নিয়ে মৃত জন্তুর গোশতের উপর রাখলেন তখনই তার আশ্চর্য হওয়ার পালা শুরু হল। তিনি দেখলেন মৃত জন্তুর উক্ত গোশতের ভিতরে আর কোন জীবানু অবশিষ্ট্য নেই। উক্ত রসের দ্বারা সমস্ত জীবানু ধ্বংস হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানী পড়েছেন : "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ"।
একটিমাত্র আয়াতের গবেষণার দ্বারা তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন।
কাদেরকে বিবাহ করা হারাম এবং কাদেরকে বিবাহ করা বৈধ?
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
অর্থাৎ, নিশ্চয় আপনার পুর্বে অনেক রাসুলকে প্রেরণ করেছি। আমি তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছি। (সুরা রা'দ ৩৮)
মানবতার মুক্তির দিশারী রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
من تزوج فقد استكمل نصف الإيمان فليتق الله في النصف الباقي
অর্থাৎ, যে বিবাহ করল সে যেন দ্বীনের অর্ধেকটা পুর্ণ করল। বাকী অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে। (মু'জামুল আওসাত,তাবারানী)
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ)আমাদের আদর্শ।আমাদের জীবনে আমরা কোন কাজ কিভাবে করব রাসুল (সাঃ)সেটি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে:
عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীদের বাড়ীতে তিনজন লোক আসলেন। তারা রাসুল (সাঃ) এর ইবাদাত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন-তার ইবাদাত কেমন ছিল? তারা রাসুল (সাঃ) এর ইবাদাত সম্বন্ধে তাদেরকে জানালে তারা সেটাকে খুবই কম মনে করলেন। তারা বললেন: কোথায় নবী (মর্যাদার দিক থেকে) আর কোথায় আমরা? কারণ, আল্লাহ তায়ালা নবীজী (সাঃ) এর পুর্ব ও পরবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন: আমি এখন থেকে সর্বদা সারারাত্র নামাজ পড়ব। দ্বিতীয়জন বললেন: আমি এখন থেকে আজীবন (সাওমে দাহর) রোজা রাখতে থাকব। রোজা ভাঙ্গবো না। তৃতীয়জন বললেন: আমি নারী সংগ থেকে দূরে থাকব আজীবন বিবাহ করব না। অতঃপর রাসুল (সাঃ) তাদের কাছে এসে বললেন: তোমরা এমন সব কথা বলছিলে! জেনে রাখ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের থেকে আল্লাহকে অনেক বেশী ভয় করি। এতদসত্ত্বেও আমি রোজা রাখি আবার রোজা ছেড়ে দিই, নামাজ পড়ি, ঘুমাই এবং বিবাহ করি। যে ব্যক্তি আমার এ সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার উম্মত নয়। (বুখারী শরীফ)
ইসলামিক স্কলাররা বলেছেন: নফল নামাজের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
অর্থাৎ, হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যে সামর্থবান সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করায় সহায়ক হয়। আর যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন (তার পরিবর্তে) রোজা রাখে। কেননা, তা তার জন্য ঢালস্বরূপ (অনেক অপরাধ হতে রক্ষা করে)। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ, দারেমী, নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ। ইবনে আবি শায়বা, মুসনাদে হুমায়দী প্রভৃতি)
এবার আসুন! আমরা দেখে নিই কাদেরকে বিবাহ করা বৈধ এবং কাদেরকে বিবাহ করা বৈধ নয়।
আল্লাহ তায়ালা এ সম্বন্ধে কুরআন শরীফে বলেন:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَنْ تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا (23) وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ
অর্থাৎ, তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা,কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধমাতা, দুধ বোন, শাশুড়ী, দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এমন স্ত্রীর অন্য ঘরের যে কন্যা তোমার লালন পালনে আছে; যদি তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত না হয় তাহলে, তাকে বিবাহ করাতে দোষ নেই। এ ছাড়া তোমাদের ঐরসজাত পুত্রের স্ত্রী, ও একত্রে দুই সহদরা বোনকে বিবাহাধীনে রাখা। তবে, আয়াত নাযিলের পুর্বে যা হয়ে গেছে তা আলাদা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর (শরীয়ত সম্মত পন্থায় প্রাপ্ত) ক্রীতদাসী ব্যতিত বিবাহিতা (যে অন্যের বিবাহাধীনে আছে) মহিলাদেরকেও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এদের বাইরে যে কোন (মুসলিম বা আহলে কিতাব) মহিলাকে তোমাদের জন্য বিবাহ করা বৈধ করা হয়েছে। এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট। (সুরা নিসা: ২৩-২৪)
যে সমস্ত মহিলাদেরকে বিবাহ করা হারাম তাদেরকে দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ মহিলা:তারা তিন শ্রেণীর।
ক.বংশগত কারণে নিষিদ্ধ: তারা হচ্ছেন-
১. মাতা
২. দাদী
৩. নানী
৪. নিজের মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে যত নিচেই যাক না কেন।
৫. আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন।
৬. নিজের ফুফু, পিতা, মাতা, দাদা, দাদী, নানা ও নানীর ফুফু।
৭. নিজের খালা, পিতা, মাতা, দাদা, দাদী, নানা ও নানীর খালা।
৮. আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই ও বৈপিত্রেয় ভাই ও তাদের অধঃতন ছেলেদের কন্যা।
৯. আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন ও তাদের অধঃতন মেয়েদের কন্যা।
খ. দুগ্ধ সম্বন্ধীয় কারণে নিষিদ্ধ:
বংশগত কারণে যাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ দুগ্ধ সম্বন্ধের কারণেও তারা নিষিদ্ধ। তবে, শর্ত হচ্ছে-
দুই বছরের আগেই স্তন্য পান করা। দুই বছর বয়সের পর স্তন্য পান করলে স্তন্যদান কারীনীর সাথে তার দুগ্ধ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে না।
গ. বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণে নিষিদ্ধ:
১. পিতা, দাদা ও নানা (যতই উপরে যাক না কেন) যাদেরকে বিবাহ করেছেন।
২. কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হোক বা না হোক উক্ত পুরুষের পুত্র-পোত্র বা প্রপোত্রের সাথে মহিলার বিবাহ নিষিদ্ধ।
৩. কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হোক বা না হোক উক্ত পুরুষের পিতা-দাদা বা নানার সাথে মহিলার বিবাহ নিষিদ্ধ।
৪. শাশুড়ী। মহিলার সাথে বিবাহ হলেই তার মাতা ও দাদী বা নানী হারাম হয়ে যাবে। দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হোক বা না হোক।
৫. স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেই তার কন্যা, তার পুত্রের কন্যা ইত্যদি হারাম হয়ে যাবে।
সাময়িক কারণে কখনো কখনো মহিলাকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। উক্ত কারণ দূর হয়ে গেলে তাকে বিবাহ করা বৈধ হবে।
১. কোন মহিলাকে বিবাহ করলেই তার আপন বোন, ফুফু, খালাকে বিবাহ করা হারাম গণ্য হবে। তবে, তাকে যখন তালাক দিয়ে দেবে কিংবা, স্বামী মারা যাবে এবং সে ইদ্দত শেষ করবে, তখন তাকে সে বিবাহ করতে পারবে।
২. যে মহিলা অন্যের বিবাহাধীনে ছিল। তাকে স্বামী তালাক দিয়েছে কিংবা মারা গেছে এবং সে ইদ্দত পালন করছে; এমতাবস্থায় তাকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। ইদ্দত শেষ হয়ে গেলেই বিবাহ করতে পারবে।
অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে,খালাতো,মামাতো,ফুফাতো বা চাচাতো বোনকে বিবাহ করা যাবে কিনা?
তার উত্তর হচ্ছে- আসলে আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতে যাদের সাথে বিবাহ করা নিষিদ্ধ সকলের কথাই বলে দিয়েছেন।খালাতো,মামাতো,ফুফাতো বা চাচাতো বোন তাদের মধ্যকার কেউ নন।অতএব,তাদেরকে বিবাহ করাও বৈধ হবে।
এমনকি,চাচা মারা গেলে বা তালাক দিয়ে দিলে চাচীকে বিবাহ করার বৈধতাও ইসলাম দিয়েছে।তবে,তাদেরকে বিবাহ করবেন কি করবেন না সেটা আপনার ইচ্ছা।
বি:দ্র:নিকটাত্মীয় স্বজনদের মধ্যকার খালাত,মামাতো,ফুফাতো বা চাচাতো বোনকে বিবাহ করা বৈধ হলেও অনেক আলেম তাদেরকে বিবাহ না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ,নিকতাত্মীয় স্বজনদেরকে বিবাহ করলে সন্তান নাকি দুর্বল হয়। তবে,তা হারাম বা অবৈধ নয়।
ক্লোনিং পদ্ধতি ও ইসলাম
স্বরুপঃ অনেকেই এ সম্বন্ধে জানেন তারপরেও এ সম্বন্ধে যারা জানেন না তাদের জন্য কিছুটা আলোচনা করা যাক। ক্লোনিং হচ্ছে পুরুষ ও নারীর দৈহিক মিলন ব্যতিত সম্পূর্ণ ভিন্ন সিস্টেমে সন্তান উৎপন্ন করার একটা আধুনিক সিস্টেম । সেটা হল- কোন মানুষের দেহ থেকে কোষ নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করার পর তা কোন মহিলার গর্ভে রাখার নির্দিষ্ট সময় পর মহিলা বাচ্চা প্রসব করবে। এতে পুরুষ নারীর দৈহিক মিলনের প্রয়োজন নেই। এর কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে।
১। এক মহিলার শরীর থেকে কোষ নিয়ে অন্য মহিলার গর্ভে রাখা।
২। কোন মহিলার নিজের শরীর থেকে কোষ নিয়ে তার গর্ভে রাখা। এখানে অন্য পুরুষ তো দুরের কথা অন্য কোন মহিলার ও দরকার হচ্ছে না।
৩। অন্য কোন পুরুষের শরীর থেকে কোষ নিয়ে মহিলার গর্ভে স্থাপন।
৪। স্বামীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে স্ত্রীর গর্ভে স্থাপন।
ক্লোনিং-এর ইতিহাসঃ ১৯৯৭ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী সারা বিশ্বকে কাপিয়ে তুলল একটি ঘটনা। সেটা হচ্ছে স্কটল্যান্ডে ক্লোনিং এ বিজ্ঞানীদের সফলতা। তারা একটা ভেড়ীর স্তন থেকে কোষ নিয়ে ছয়দিন পর্যন্ত ল্যাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়ে আরেকটি ভেড়ীর গর্ভে স্থাপন করার পর গর্ভের মেয়াদ শেষে উক্ত ভেড়ী বাচ্চা জন্ম দেয় যার নাম দেয়া হয় "ডলি"। এরপর বিভিন্ন সময় ইদুর,গরু, খরগোশ ও অন্যান্য প্রাণির ক্লোনিং এর উপর সফল পরীক্ষা চালানো হয়। অনুরুপ ভাবে ২০০২ সালের জানুয়ারীতে একটি বিড়ালের জন্ম হয়।
একটি সুত্র থেকে জানা যায়, ২৭০ বার পরীক্ষা চালানোর পর বিজ্ঞানীরা "ডলি"র জন্মের মাধ্যমে তাদের সফলতার মুখ দেখেন। এ ছাড়াও ২০০৩ সালের ২৬শে জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় আমেরিকার বাইরে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে বিশ্বের প্রথম ক্লোনিং মানব শিশুর জন্ম হয়।তার নাম দেয়া হয় "হাওয়া" তবে, স্থানটার নাম প্রকাশ করা হয় নি। ক্লোনিং মানব শিশুর জন্য বিজ্ঞানীরা ১০ বার পরীক্ষা চালিয়ে সফলতার মুখ দেখেন।
ক্লোনিং সন্তানের বৈশিষ্ট্যঃ ক্লোনিং সিস্টেমে জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষনীয়।
১। পুরুষের থেকে কোষ নিলে সন্তান অবশ্যই পুরুষ হবে। এবং নারীর শরীর থেকে কোষ নিলে সন্তান নারী হবে।
২। সন্তানের চেহারা সুরত ও বংশগত অন্যান্য গুণাবলীতে যার থেকে কোষ নেয়া হয়েছে পুরোপুরি তার মত হবে। সে যেন উক্ত ব্যক্তির অবিকল ফটোকপি।
এবার আসুন! আমরা দেখে নিই ইসলাম এগুলো সম্বন্ধে কি বলে?
ইসলামের বিধান সর্বকালের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। কুরআন ও হাদীসে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো কুরআন নাযিলের সমসাময়িক যুগে বর্তমান ছিল তার সমাধান দিয়েছে বা ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে তার সমাধান দেয়া হয়েছে বা যেগুলো পরবর্তীতে হবে তার সমাধানের জন্য কিছু কিছু সূত্র দিয়ে দিয়েছে যার মাধ্যমে সর্বদা যে কোন বিষয়ের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই সহজ হয়। সুত্র দ্বারা বিচার করলে সর্বদা কোন কিছুর লেটেস্ট সমাধান পাওয়া যায়। ফলে, প্রাচীন যুগের জন্য এটা প্রযোজ্য ছিল এখন আর নেই এটা বলার কোন উপায় থাকে না।
প্রথম পদ্ধতিঃ এক মহিলার গর্ভ থেকে কোষ নিয়ে অপর মহিলার গর্ভে সন্তান উৎপাদন বৈধ হবে না ।
দলীলঃ
১। ইসলামী শরীয়ত সম্মত পন্থায় বিভিন্ন শর্ত ও যথাযথ নিয়ম সাপেক্ষে বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সংসার করার মাধ্যমে সন্তান হওয়া উচিত। আল্লাহ বলেনঃ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
অর্থাৎ, হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে। আর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। আর তাদের দু'জনের মাধ্যমে অনেক পুরুষ ও নারীর প্রসার ঘটিয়েছেন। (সুরা নিসাঃ ১)
* وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
অর্থাৎ, আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসুল পাঠিয়েছি আর তাদের জন্য জোড়া ও বংশ সৃষ্টি করেছি। (সুরা রা'দঃ ৩৮)
* وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَنِينَ وَحَفَدَةً অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন। এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পূত্র ও পৌত্রাদি দান করেছেন। (সুরা নাহলঃ ৭২)
ক্লোনিং পদ্ধতিটা বৈবাহিক সম্পর্কের আওতায় হয় না। উপরোক্ত (১ নং পদ্ধতিতে) দুই মহিলার কেহই অপরের স্বামী হতে পারে না। আর দুই মহিলার ভিতরকার বিবাহ ও দৈহিক সম্পর্ক অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
২। দুই মহিলার মধ্যকার দৈহিক সম্পর্ক আরবীতে যাকে বলে "সিহাক" হারাম। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে তা হারাম। আবু দাউদ শরীফে এর নিষিদ্ধতা সম্বন্ধে একটি হাদীস এসেছে। এছাড়াও "ইশারাতুন নাস" তথা কুরআন হাদীসের ইংগিত দ্বারা এটার নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হয়েছে।
৩। সব মানুষের চাই সে পুরুষ হোক বা মহিলা কিছু চাহিদা আছে তন্মধ্যে জৈবিক চাহিদা অন্যতম যে চাহিদা মেটানো তার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়। সেটা বিবাহের মাধ্যমে হালাল পন্থায় বা বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ পন্থায় হতে পারে। এ জন্য আমরা দেখি ইসলাম বৈরাগ্যতাকে হারাম করেছে। আল্লাহ তায়ালা উন্নত ও সুন্দর পন্থায় বিবাহের মাধ্যমে এ চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা রেখেছেন। মহিলা প্রাকৃতিক সিস্টেম ছাড়া ক্লোনিং এর মাধ্যমে সন্তান নিলে তার উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাটি পুরণ হল না। তার স্বামী থাকলে বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে সন্তান হত। এটা সমাজে বিবাহের পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। যদি এটা এভাবে চলতে দেয়া হয় তাহলে সমাজে তা রেওয়াযে পরিণত হয়ে যেতে পারে। যা সমাজের পারিবারিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই, সে পথটা বন্ধ করে দিতে হবে। ইসলামী শরীয়তের একটা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বা কায়েদা হচ্ছে- "যদি কোন কাজ অন্য কোন খারাপের দিকে টেনে নিয়ে যায় তাহলে তাও বৈধ হবে না"। এ সূত্র অনুযায়ী ক্লোনিং সিস্টেম ও বৈধ নয়।
৪। এ সিস্টেমে জন্ম নিবে কন্যা সন্তান, যার কোন পিতা নেই। এ শিশু এমনভাবে বেড়ে উঠবে যার কোন পিতা নেই । এটা তার জন্য মনোকষ্টের কারণ হবে। ইসলাম যেকোন ধরণের কষ্ট ও অনিষ্টতাকে নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের সমাজে আমরা অহরহ দেখে থাকি যে, যারা এতিম অবস্থায় দুনিয়ায় আসে বা যাদের ছোট বয়সে পিতামাতা মারা যায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনে মনে অত্যন্ত কষ্ট পেয়ে থাকে। তেমনিভাবে যাদেরকে মানুষ কুড়িয়ে পায় তাদেরও একই অবস্থা। শিশুরা যে সমস্ত কারণে মনোকষ্ট পায় তন্মধ্যে রয়েছে মানসিক ও শারিরীক কষ্ট। মানসিক কষ্টের মধ্যে রয়েছে যেমন পিতামাতার মধ্যকার শুধুমাত্র কোন একজনের সাথে থাকা হোক তাদের একজন মারা যাওয়ার কারণে বা তালাক দেয়ার কারণে ইত্যাদি।
ক্লোনিং সিস্টেমে জন্ম নেয়া শিশুও তেমনি সমাজের অন্যান্য সাধারণ মেয়ের মত থাকতে পারে না। সে এমন ভাবে সমাজে বেড়ে ওঠে যার কোন পিতা,চাচা,দাদা কেউ নেই। এ ধরণের মেয়ের বিবাহের সময় কেউ এগিয়ে আসবে না। এমন যুবক কে আছে যে পিতা-চাচা বিহীন এমন মেয়েকে বিবাহ করতে এগিয়ে আসবে? এর বিবাহ হলে তার সন্তানদের নানা থাকবে না। এছাড়াও প্রচুর সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়।
৫।রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ অর্থাৎ, যা সন্দেহ সৃষ্টি করে তা ছেড়ে দিয়ে যা সন্দেহ সৃষ্টি করে না তার দিকে যাও।(বুখারী,তিরমীজী,আহমদ)
বিজ্ঞানীরা এভাবে সন্তান সুস্থ হয়ে জন্মাবে কিনা তা বলেন নি। এমনও হতে পারে যে, সন্তানের শারিরীক ত্রুটি নিয়ে জন্ম হবে। গৃহীত কোষের বয়সানুপাতে তার বয়স কম হতে পারে। কিংবা, সন্তানের অভ্যাস অস্বাভাবিক হতে পারে। তাই,এগুলো থেকে সর্বদা আমাদের দূরে থাকা উচিত। আমাদের উচিত নয় মানুষকে শুধুমাত্র গবেষণার সামগ্রী হিসেবে গ্রহণ করা।
৬। একটি সুত্র পাওয়া যায় এগুলো নিয়ে যে, "যার অধিকার আছে কোন মহিলার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার শুধুমাত্র তারই অধিকার আছে স্ত্রীর গর্ভকে ব্যস্ত রাখার"। আর কোন নারীর জন্য বৈধ নয় যে, সে অপর কোন নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক রাখবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ কোন মহিলার নিজের শরীর থেকে কোষ নিয়ে তারই গর্ভে প্রতিস্থাপন করে সন্তান উৎপাদনের সিস্টেমটা ও বৈধ হবে না।
দলীলঃ উপরের ২য় ও ৬ষ্ঠ নং ছাড়া বাকীগুলো এর দলীল হিসেবে পরিগণিত হবে।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ স্বামী ব্যতিত অন্য পুরুষের শরীর থেকে কোষ নিয়ে মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করে সন্তান উৎপাদন এটাও বৈধ নয়। কেননা, এটা সরাসরি ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের কাছাকাছি পর্যায়ের। এটা হলে সমাজে বংশের মিশ্রনের দ্বার খুলে দেয় ব্যভিচারের মত। কে কার সন্তান তা জানার কোন সুরত অবশিষ্ট থাকবে না। সন্তান হবে শুধুমাত্র বৈধ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। এগুলো চিন্তা-গবেষণা করা ছাড়াই বুঝা যায়।
চতুর্থ পদ্ধতিঃ নিজের স্বামীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে সন্তান উৎপাদন করার বৈধাবৈধের বিষয়টা চিন্তা-গবেষণার দাবী রাখে। কেননা, এখানে ব্যাপারটা ব্যভিচারের সাথে যুক্ত নয়।
ইসলামিক গবেষকগণ এই পদ্ধতির বৈধাবৈধের ব্যাপারটিকে আপাতত স্থগিত রেখেছেন বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফলের অপেক্ষায়। বিজ্ঞানীরা যদি গবেষণা করে ফলাফলে আসেন যে, উপরোক্ত সমস্ত প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে সন্তান মুক্ত থাকবে তাহলে কয়েকটি শর্ত-সাপেক্ষে তা বৈধ হবে। শর্তগুলো হল-
১। সন্তানেরা দ্বিতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত কোন ধরণের অস্বাভাবিক ক্ষতির সন্মুখিন হতে পারবে না। মায়েরাও তদ্রুপ ক্ষতির সন্মুখীন হবে না। মায়েদের ক্ষতির মধ্যকার একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে বারবার গর্ভপাত ঘটানো। যেমনটা ঘটেছে প্রথম ক্লোনিং "ডলি"র ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ২৭০ বার ব্যর্থ পরীক্ষার পর সফল হয় বলে জানা যায়।
২। স্বামী হবে বন্ধ্যা। অন্য কোন প্রকারেই তার সন্তান হওয়া সম্ভব নয়।
৩। শুধুমাত্র একটি শিশুর ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া যায়। কেননা, এটা জরুরী অবস্থার সাধারণ অনুমতি। জরুরী অবস্থার অনুমতি সর্বদা অব্যাহত থাকে না।এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, পিতার মত সন্তানও বন্ধ্যা হতে পারে। যদি তা না হয়(গবেষণার উপর নির্ভর করবে) তাহলে এ শর্ত প্রযোজ্য নয়।
তবে, কিছু কিছু ইসলামিক স্কলার এটাকে নিষেধ করে থাকেন। তাদের দলীল সমুহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
কিছু সংখ্যক জীব বিজ্ঞানীর মতে এ সিস্টেমে সন্তান হলে সে হবে উক্ত স্বামীর জমজ ভাই। কারণ, ৪৬ ক্রোমোজমের মধ্যকার ২৩ টি আসে স্বামী থেকে বাকী ২৩ টি স্ত্রী থেকে। কিন্তু, এ সিস্টেমে তা হচ্ছে না বরং স্বামীর শরীরের ৪৬ টি ক্রোমোজমই কপি হয়ে অনুলিপি হিসেবে এখানে এসেছে যা উক্ত স্বামীর পিতামাতা থেকে এসেছে। এখানে উল্লেখিত স্ত্রী লোকের (যার গর্ভে রাখা হবে) কোন ক্রোমোজম এখানে প্রভাব ফেলে নি। সুতরাং, শিশু উক্ত স্বামীর ছেলে হবে না বরং ভাই বিবেচিত হবে। সুতরাং, এ পদ্ধতিও বৈধ নয়। তবে, জমজ ভাই বিবেচিত হওয়া নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন কেননা, তারা দুজনে এক গর্ভ থেকে আসে নি। সুতরাং, জমজ হবে কিভাবে?
ক্লোনিংকে বিশ্ববাসী কিভাবে নিয়েছেঃ ১৯৯৮ সালের ২রা জানুয়ারী ইউরোপের ১৯ টি দেশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আন্তর্জাতিক সন্মেলনে ক্লোনিং নিষিদ্ধের ব্যাপারে একমত হয়। তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, মৃত বা জীবিত কোন মানুষের ক্লোনিং করার যে কোন পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হল। তবে, বৃটেন ও জার্মানী এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। বৃটেনের বক্তব্য ছিল যে, এটা খুবই কঠোর আইন পক্ষান্তরে, জার্মানীর দাবি ছিল যে, এটা অত্যন্ত দুর্বল সিদ্ধান্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট "বিল ক্লিংটন" ঘোষণা করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন মানব ক্লোনিং এর গবেষণার জন্য কোন অর্থ ছাড় দেবে না। এবং বিজ্ঞানীদের থেকে এ অংগনে গবেষণা করাকে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
এ ছাড়াও ইতালি সরকার মানব ক্লোনিং বা যে কোন প্রাণির ক্লোনিং কে শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করে।
ফ্রান্স সরকার এ ধরণের গবেষনার চিন্তাও প্রত্যাখ্যানযোগ্য বলে জানিয়ে দেয়।
অন্যান্য প্রাণীর ক্লোনিং পদ্ধতিঃ অন্যান্য প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্লোনিং এ কোন সমস্যা নেই। যদি তা মানুষের উপকারে আসে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে শুধুমাত্র খেল তামাশার কাজে ব্যবহৃত না হয়। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছুকে মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরী করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ هو الذي خلق لكم ما في الأرض جميعاঅর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন (সুরা বাকারাঃ ২৯)
অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا অর্থাৎ, আর তিনি আসমান ও জমীনের সবকিছুকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। (সুরা জাছিয়াহঃ ১৩)
তার স্ত্রী মনে করে না যে নেকাব বাধ্যতামূলক, তার কি তাকে (স্ত্রী) এটা পরার জন্য চাপ দেয়া উচিত হবে?
আমি নেকাব সম্পর্কে অনেক ফতোয়া পড়েছি, এবং আমার কাছে অধিকাংশ স্কলারদের মতামত অনুযায়ী এটা বাধ্যতামূলক বলে মনে হয়েছে। অনান্য স্কলারদের মতানুসারে আমার স্ত্রী আমাকে বোঝাতে চাচ্ছে যে এটা পরা ভালো, তবে বাধ্যতামূলক নয়। সে বলেছে আল্লাহ চাইলে সে ভবিষ্যতে নেকাব পরতেও পারে। আল্লাহর রহমতে আমার স্ত্রী মোটামুটি ধর্মভীরু। আমার প্রশ্ন হলোঃ আমি কি তাকে নেকাব পরার জন্য চাপ দেব নাকি শুধু উপদেশ দিয়ে এটা তার উপরই ছেড়ে দেব?
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
ইসলামিক স্কলারদের দুই ধরণের মতামতের মধ্যে অধিকতর যুক্তিসঙ্গত মতানুসারে নারীদেরকে মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল ঢেকে রাখতেই হবে। এ বিষয়ে প্রশ্ন নং ১১১৭৪ এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যেসব ‘ফুকাহা’ মুখমন্ডলকে ‘আওরাহ’ মনে করেন না তারাও মনে করেন যে যদি বিশৃঙ্খলা কিংবা ব্যভিচারের আশংকা থাকে তবে অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে।
স্বামীদেরকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে এবং পরিবারের সদস্যদের হারাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে। এজন্য তার প্রাণপনে চেষ্টা করা উচিত তার স্ত্রীকে মুখমন্ডল ঢেকে রাখাতে উৎসাহিত করা। যদি তার স্ত্রী এটি প্রত্যাখান করে তবে তার উচিত তা করতে তাকে চাপ দেয়া এবং স্ত্রীর উচিত তাকে মান্য করা। কারণ তার স্বামী তাকে এমন কিছু করতে বলছে যেটা তার স্ত্রীর মতে ইচ্ছামূলক এবং সে এটাকে হারামও মনে করে না। তাই স্বামীর সম্মান রক্ষার্থে স্ত্রীর এটা পরাই উচিত।
৯৭১২৫ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে দম্পতিদের স্কলারদের মধ্যে মতের ভিন্নতা আছে এরূপ বিষয়ের মধ্যে সঠিকটি বিবেচনা করতে হয়। সেখানে আমরা যা বলেছি তা হলোঃ যেসব বিষয় স্ত্রীদের জন্য আইনসম্মত, স্বামীদের অধিকার আছে তাদের স্ত্রীদের তা করা থেকেও বিরত রাখার অথবা তাকে তার নিজের মতামত অনুসরণ করানোর, যদি তিনি(স্বামী) মনে করেন এটি হারাম এবং তাকে(স্ত্রী) অবশ্যই তার স্বামীর মতামতকে গ্রহণ করতে হবে যদি তার কর্মকান্ড তার স্বামীর ক্ষতি করে অথবা তাকে আবমাননা অথবা অপমান করে। উদাহরণস্বরূপ, মুখমন্ডল ঢেকে রাখা সম্পর্কে স্কলারদের ভিন্ন মতামত রয়েছে, কিন্তু এমন কেউ নেই যিনি মনে করেন মুখমন্ডল ঢেকে রাখা হারাম। যদি তিনি(স্ত্রী) মনে করেন মুখমন্ডল ঢেকে না রাখা বৈধ তার(স্বামী) অধিকার আছে তাকে(স্ত্রী) তার মুখমন্ডল মাহরাম পুরুষ ব্যতীত অন্য পুরুষদের দেখানো থেকে বিরত রাখার। তার(স্বামী) অধিকার আছে তাকে(স্ত্রী) মুখমন্ডল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক এই মতামত অধিকতর সঠিক বলে তা মেনে চলানোর এবং স্ত্রীর অধিকার নেই স্বামীর মতামতের বিরূদ্ধে যাবার। তিনি তার প্রভুকে মেনে চলার জন্য তার স্বামীকে মেনে চলেছেন এবং অধিকতর পর্দা করেছেন এ কারণে তাকে আখিরাতে পুরুষ্কৃত করা হবে।
তাছাড়া আমরা মনে করি, মুখমন্ডল ঢাকা ব্যতীত কি স্ত্রীদের পুরুষের স্থিরভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা হতে রক্ষা করতে পারে? এটা সবাই জানে মুখমন্ডল সকল সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু এবং ফিতনার উৎসস্থল। মুখমন্ডলের দিকেই মানুষ প্রথম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যদি কোন মেয়ে মনে করে এটি মুস্তাহাব এবং বাধ্যতামূলক নয় তাদের বলতে হয় মুস্তাহাব পালনে কোনো অন্যায় নেই বরং তা একজন মানুষকে তার প্রভুর কাছাকাছি নিয়ে আসে। সেইসাথে যদি তা আপনার স্বামীকে সন্তুষ্ট করে এবং আপনাকে অধিকতর বিশ্বাসী নারীগণের যেমনঃ মহানবী (সাঃ) এর ও সাহাবীগপণের স্ত্রীদের সদৃশ করে তবে ক্ষতি কী।
সকল বিশ্বাসী নারীদের নিজেদের এভাবে আবৃত করতে উৎসাহিত হওয়া উচিত, এবং এটি ত্বরান্বিত করা উচিত। সেই সাথে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করা উচিত যে তিনি তার স্বামীকে তাকে এটি করতে উৎসাহিত করার তৌফিক দান করেছেন।
আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমদের তিনি যা ভালবাসেন ও সন্তুষ্ট হন তেমনি কাজ করার তৌফিক দান করেন।
এবং আল্লাহ সর্বাপেক্ষা ভাল জানেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
এই নোটটি www.islam-qa.com নামক সাইট হতে অনুবাদ করা হয়েছে। মূল নোটটি এই লিংকে পাওয়া যাবে।