আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
অর্থাৎ, নিশ্চয় আপনার পুর্বে অনেক রাসুলকে প্রেরণ করেছি। আমি তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছি। (সুরা রা'দ ৩৮)
মানবতার মুক্তির দিশারী রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
من تزوج فقد استكمل نصف الإيمان فليتق الله في النصف الباقي
অর্থাৎ, যে বিবাহ করল সে যেন দ্বীনের অর্ধেকটা পুর্ণ করল। বাকী অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে। (মু'জামুল আওসাত,তাবারানী)
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ)আমাদের আদর্শ।আমাদের জীবনে আমরা কোন কাজ কিভাবে করব রাসুল (সাঃ)সেটি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে:
عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীদের বাড়ীতে তিনজন লোক আসলেন। তারা রাসুল (সাঃ) এর ইবাদাত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন-তার ইবাদাত কেমন ছিল? তারা রাসুল (সাঃ) এর ইবাদাত সম্বন্ধে তাদেরকে জানালে তারা সেটাকে খুবই কম মনে করলেন। তারা বললেন: কোথায় নবী (মর্যাদার দিক থেকে) আর কোথায় আমরা? কারণ, আল্লাহ তায়ালা নবীজী (সাঃ) এর পুর্ব ও পরবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন: আমি এখন থেকে সর্বদা সারারাত্র নামাজ পড়ব। দ্বিতীয়জন বললেন: আমি এখন থেকে আজীবন (সাওমে দাহর) রোজা রাখতে থাকব। রোজা ভাঙ্গবো না। তৃতীয়জন বললেন: আমি নারী সংগ থেকে দূরে থাকব আজীবন বিবাহ করব না। অতঃপর রাসুল (সাঃ) তাদের কাছে এসে বললেন: তোমরা এমন সব কথা বলছিলে! জেনে রাখ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের থেকে আল্লাহকে অনেক বেশী ভয় করি। এতদসত্ত্বেও আমি রোজা রাখি আবার রোজা ছেড়ে দিই, নামাজ পড়ি, ঘুমাই এবং বিবাহ করি। যে ব্যক্তি আমার এ সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার উম্মত নয়। (বুখারী শরীফ)
ইসলামিক স্কলাররা বলেছেন: নফল নামাজের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
অর্থাৎ, হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যে সামর্থবান সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করায় সহায়ক হয়। আর যে বিবাহের সামর্থ রাখে না সে যেন (তার পরিবর্তে) রোজা রাখে। কেননা, তা তার জন্য ঢালস্বরূপ (অনেক অপরাধ হতে রক্ষা করে)। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ, দারেমী, নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ। ইবনে আবি শায়বা, মুসনাদে হুমায়দী প্রভৃতি)
এবার আসুন! আমরা দেখে নিই কাদেরকে বিবাহ করা বৈধ এবং কাদেরকে বিবাহ করা বৈধ নয়।
আল্লাহ তায়ালা এ সম্বন্ধে কুরআন শরীফে বলেন:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُمْ مِنْ نِسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَإِنْ لَمْ تَكُونُوا دَخَلْتُمْ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَنْ تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا (23) وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ
অর্থাৎ, তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা,কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধমাতা, দুধ বোন, শাশুড়ী, দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এমন স্ত্রীর অন্য ঘরের যে কন্যা তোমার লালন পালনে আছে; যদি তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত না হয় তাহলে, তাকে বিবাহ করাতে দোষ নেই। এ ছাড়া তোমাদের ঐরসজাত পুত্রের স্ত্রী, ও একত্রে দুই সহদরা বোনকে বিবাহাধীনে রাখা। তবে, আয়াত নাযিলের পুর্বে যা হয়ে গেছে তা আলাদা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর (শরীয়ত সম্মত পন্থায় প্রাপ্ত) ক্রীতদাসী ব্যতিত বিবাহিতা (যে অন্যের বিবাহাধীনে আছে) মহিলাদেরকেও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এদের বাইরে যে কোন (মুসলিম বা আহলে কিতাব) মহিলাকে তোমাদের জন্য বিবাহ করা বৈধ করা হয়েছে। এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট। (সুরা নিসা: ২৩-২৪)
যে সমস্ত মহিলাদেরকে বিবাহ করা হারাম তাদেরকে দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ মহিলা:তারা তিন শ্রেণীর।
ক.বংশগত কারণে নিষিদ্ধ: তারা হচ্ছেন-
১. মাতা
২. দাদী
৩. নানী
৪. নিজের মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে যত নিচেই যাক না কেন।
৫. আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন।
৬. নিজের ফুফু, পিতা, মাতা, দাদা, দাদী, নানা ও নানীর ফুফু।
৭. নিজের খালা, পিতা, মাতা, দাদা, দাদী, নানা ও নানীর খালা।
৮. আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই ও বৈপিত্রেয় ভাই ও তাদের অধঃতন ছেলেদের কন্যা।
৯. আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন ও তাদের অধঃতন মেয়েদের কন্যা।
খ. দুগ্ধ সম্বন্ধীয় কারণে নিষিদ্ধ:
বংশগত কারণে যাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ দুগ্ধ সম্বন্ধের কারণেও তারা নিষিদ্ধ। তবে, শর্ত হচ্ছে-
দুই বছরের আগেই স্তন্য পান করা। দুই বছর বয়সের পর স্তন্য পান করলে স্তন্যদান কারীনীর সাথে তার দুগ্ধ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে না।
গ. বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণে নিষিদ্ধ:
১. পিতা, দাদা ও নানা (যতই উপরে যাক না কেন) যাদেরকে বিবাহ করেছেন।
২. কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হোক বা না হোক উক্ত পুরুষের পুত্র-পোত্র বা প্রপোত্রের সাথে মহিলার বিবাহ নিষিদ্ধ।
৩. কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হোক বা না হোক উক্ত পুরুষের পিতা-দাদা বা নানার সাথে মহিলার বিবাহ নিষিদ্ধ।
৪. শাশুড়ী। মহিলার সাথে বিবাহ হলেই তার মাতা ও দাদী বা নানী হারাম হয়ে যাবে। দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হোক বা না হোক।
৫. স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেই তার কন্যা, তার পুত্রের কন্যা ইত্যদি হারাম হয়ে যাবে।
সাময়িক কারণে কখনো কখনো মহিলাকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। উক্ত কারণ দূর হয়ে গেলে তাকে বিবাহ করা বৈধ হবে।
১. কোন মহিলাকে বিবাহ করলেই তার আপন বোন, ফুফু, খালাকে বিবাহ করা হারাম গণ্য হবে। তবে, তাকে যখন তালাক দিয়ে দেবে কিংবা, স্বামী মারা যাবে এবং সে ইদ্দত শেষ করবে, তখন তাকে সে বিবাহ করতে পারবে।
২. যে মহিলা অন্যের বিবাহাধীনে ছিল। তাকে স্বামী তালাক দিয়েছে কিংবা মারা গেছে এবং সে ইদ্দত পালন করছে; এমতাবস্থায় তাকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। ইদ্দত শেষ হয়ে গেলেই বিবাহ করতে পারবে।
অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে,খালাতো,মামাতো,ফুফাতো বা চাচাতো বোনকে বিবাহ করা যাবে কিনা?
তার উত্তর হচ্ছে- আসলে আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতে যাদের সাথে বিবাহ করা নিষিদ্ধ সকলের কথাই বলে দিয়েছেন।খালাতো,মামাতো,ফুফাতো বা চাচাতো বোন তাদের মধ্যকার কেউ নন।অতএব,তাদেরকে বিবাহ করাও বৈধ হবে।
এমনকি,চাচা মারা গেলে বা তালাক দিয়ে দিলে চাচীকে বিবাহ করার বৈধতাও ইসলাম দিয়েছে।তবে,তাদেরকে বিবাহ করবেন কি করবেন না সেটা আপনার ইচ্ছা।
বি:দ্র:নিকটাত্মীয় স্বজনদের মধ্যকার খালাত,মামাতো,ফুফাতো বা চাচাতো বোনকে বিবাহ করা বৈধ হলেও অনেক আলেম তাদেরকে বিবাহ না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ,নিকতাত্মীয় স্বজনদেরকে বিবাহ করলে সন্তান নাকি দুর্বল হয়। তবে,তা হারাম বা অবৈধ নয়।